পরমপ্রিয় শিক্ষক: আল্লামা নাজমুদ্দীন আকিব হাফি.
যারা ভালো মানুষ, আমার বিশ্বাস, তারা সর্ব-বিষয়েই ভালো হয়ে থাকেন ৷ সবার চেয়ে সেরা মানুষ।
তাঁদের বোধহয় নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না৷ মনন-কথন আর চলন-বলন-- সবকিছু তাদের অনন্য। একদম শুভ্র-সফেদ৷ তাঁরা যখন কথা বলেন, মনে হয় যেন মুক্তো ঝরে।মুখের চওড়া হাসিটি দেখে বলতে ইচ্ছে করে-- এ যে মাঝ-আকাশে ফুটে-ওঠা ঝলমলে চাঁদ।
যখন হাঁটেন, মনে হয়, ধবল জোছনাময়ী চাঁদটি পবিত্র-শুভ্র এক চাদর দিয়ে মুড়িয়ে চলেছে পৃথিবীর প্রতিটি গ্রহপথ।
আজন্ম কতো মানুষ-অমানুষকেই তো দেখে চলেছি। স্নিগ্ধ মনের ভালো মানুষকে যেমন দেখেছি, বিভৎস-কুৎসিত আত্মার অমানুষও কম দেখা হয়নি ৷ এক তিক্ত অভিজ্ঞতা বলা যায়৷
বাস্তবতার এই জীবন-চত্বরে দাঁড়িয়ে যে মানুষটির ব্যাপারে 'সেরা' শব্দটি আমাকে উচ্চারণ করতেই হয়, তিনি হচ্ছেন আমার পরমপ্রিয় শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক, হজরত মাওলানা মুফতি নাজমুদ্দিন আকীব দা. বা.।
এই মহান ব্যক্তিত্বের অনুপম গুণাবলির বিবরণ দেয়ার যোগ্যতা আমার হয়নি।শুধু এই একটা কথা বলি, তিনি যেন স্বর্গ-জলে ডুব দিয়ে আসা এক স্বর্গীয় দূত৷ পৃথিবী যেসকল ব্যক্তিত্বকে জন্ম দিয়ে গর্ব করতে পারে, তাদেরই একজন তিনি৷
অনুচ্চ গড়নের এই মানুষটির ভেতর রয়েছে সুউচ্চ গুণাবলি।সাধাসিধে জীবন-যাপনে ফুটে ওঠে আকবিরের জীবন্ত নমুনা। সুফফার যাত্রাপথে অগ্রগামী এক মুসাফির৷
ইলমের সর্বক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে অবাধ বিরচণ৷ ছাত্রদের সবক বোঝানোর ক্ষেত্রে তাঁর ছিল অনন্য এক দক্ষতা৷ ইলমে কালামের জটিল মাসআলাগুলো বুঝিয়ে দিতেন কতো সহজ করে! আজো মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে হুজুরের সেই সজীব-স্নিগ্ধ দরসগুলো।
তিনি বিজ্ঞ মুফতি, ফক্বীহুল মিল্লাত শায়খ আব্দুর রহমান রহ.-এর অন্যতম একজন শিষ্য৷
তিনি সাব'আ আশারার বিজ্ঞ ক্বারি, রমজানে সিলেটের বিখ্যাত কুরআনি মারকাযগুলো মুখরিত থাকে তাঁর সুমধুর তেলাওয়াতে৷ ইনাবাত ইলাল্লাহ'র ময়দানে এক নীরব সাধক৷ শরীয়তের এতো 'পাবন্দ' মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
হুজুরের যে গুণটি আমাকে সবচে বেশি মুগ্ধ করেছে, তা হচ্ছে, যতদিন তাঁর কাছে ছিলাম, কোনোদিন তাঁকে অন্যের দোষচর্চা করতে দেখিনি৷ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা হুজুরের অন্যতম এক ঈর্ষণীয় বৈশিষ্ট৷
হুজুর অর্থের দিক থেকে নেহাত শূন্য। কিন্তু মনের দিক থেকে এতো শক্তিশালী ধনকুবেরের দেখা আমি আজো পাইনি৷
ক্লাসে বসে হুজুরের সাথে কথা বলা যেত একদম কাছে থেকে। যেন চাঁদ-ওঠা কোনো পূর্ণিমা-রাতে দুই বন্ধুর স্বাদের গল্প৷ অমানুষকে মনুষ্যত্বের পোশাক পরানোর ক্ষেত্রে হুজুর ছিলেন বেশ পারদর্শী। হোক সে নিজের ছাত্র বা অন্য কেউ ৷
হুজুরের কাছ থেকে চলে এসেছি আজ চারবছর হতে চলল। তবে এখনো বারবার হৃদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে তার পবিত্র-মায়াবী মুখখানি৷
হুজুর বেঁচে থাকুন প্রতিটি হৃদয়ে, শুদ্ধ চেতনার বাতিঘর হয়ে৷
লেখেছেন,কাওসার সিদ্দিক
বিভাগীয় সম্পাদক- the sunnah BD.com
কোন মন্তব্য নেই